এই নির্বাচনে আদর্শের ব্যাপারটা ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ নিয়ে অনেকে বিস্মিত কিন্তু অবাক হওয়ার কী আছে! বাংলাদেশে পুরনো সব মূল্যবোধ যেগুলিকে আমরা ঐতিহ্য বলি, তা প্রায় বিলুপ্ত। নতুন মূল্যবোধে টাকাটাই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর এবং মুখে এক কথা বুকে আরেক কথা সেটিই বৈশিষ্ট্য। রাজনীতি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে।
বাতাসে শুধু গুজব বিশেষ করে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়নে বিশাল অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে। বিএনপির ইনাম আহমদ চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া বা এহসানুল হক মিলনের মতো নিবেদিত প্রাণ রাজাকারতন্ত্রে বিশ্বাসী, এমনকী মোর্শেদ খানের মতো ধনকুবেরও হেরে গেছেন। তবে, সবাই টাকার জোরে প্রার্থী হয়েছেন তাও বলা ঠিক হবে না। এই বেচা-বিক্রি আগে ছিল না। মিডিয়াতে এসেছে গত ১০ বছরে কোন প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে সে কথা। ব্যবসায়ীদের টাকা না বাড়লে, ব্যবসা করবে কেন?
মিডিয়া বলতে চেয়েছে, রাজনীতিবিদরা দুর্নীতিবাজ, মিডিয়া মালিকদের সম্পদ কত বেড়েছে সে কথা অবশ্য কেউ জিজ্ঞেস করে ঝামেলায় পড়তে চাননি। মনোনয়নের আগে মিডিয়ার একটি অংশ শেখ হাসিনার প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন। এখন তারা নিরপেক্ষ। একটি পত্রিকায় মির্জা ফখরুলের গাড়ির ফাঁটা কাঁচের ছবি বড় করে ছেপে দেখানো হয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা সন্ত্রাস তৈরি করছে।
সরকারি দলের একজন নীতি নির্ধারক বললেন, গতরাতে না তিনি আমার [সেই কাগজের] অফিসে এসেছিলেন। একজন জানালেন, আওয়ামী লীগের দু’জন কর্মী যে বিএনপির হাতে খুন হয়েছে তা ছোট করে দেওয়া হয়েছে। তিনি জানালেন, বিএনপি কর্মীরা আগে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা করে।
সংঘাতহীন স্বর্গীয় পরিবেশে নির্বাচন হবে এটি নিশ্চয় সরকার বা বিরোধী দলের কেউ ভাবেনি। ১৯৭৫ সাালের পর থেকেই সন্ত্রাস জীবনের অঙ্গ। উপমহাদেশের তিনটি দেশেই নির্বাচনে সংঘাত হয়ে থাকে। তবে, আমরা নিশ্চয় চাইব না, সেটি মাত্রা ছাড়াক। মাত্রা ছাড়ালে তাতে সরকার ও বিরোধী দল উভয় দলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নির্বাচনে খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা আমার বিষয় নয়। আমার বিষয় অন্য।
নির্বাচনে সংঘাতময় হবে বলে কেন আশঙ্কা করছি? কারণ, এবারের সময়টা অনেকটা ১৯৭০ সালের মতো। জনগণ কি ম্যান্ডেট দেবে বঙ্গবন্ধু-কে? নাকি দেবে যারা তার বিরোধী তাদের। জনগণ সেবার ভুল করেনি। বাংলাদেশ হয়েছে।
প্রায় একযুগ বিএনপি ক্ষমতায় নেই। জামায়াতের অবস্থাও তাই। ১৯৭৫ সালের পর থেকে এক ধরনের ক্ষমতা ভোগ করছিল তারা, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষমতায় আসার জন্য তারা কী পরিমাণ মরিয়া হয়ে উঠেছিল তার প্রমাণ ২০১৪ সালের ঘটনাবলি। এবার নির্বাচন না করলে বা ক্ষমতায় না এলে বিএনপি এবং জামায়াত হ্যারিকেন পার্টি বা মুসলিম লীগে পরিণত হবে। বিদ্যুতের ঝলমল আলো ছেড়ে হ্যারিকেন হাতে নেওয়া কি খুব সুখের? গত তিন দশক এরা যে সম্পদ লুটপাট করেছে সেগুলি রক্ষা ও পার্টি টিকিয়ে রাখতে না পারলে ক্ষমতার কোনও ভিত্তি থাকবে না।
আওয়ামী লীগও জানে, বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে প্রথম এক সপ্তাহেই সিভিল মিলিটারি আমলা, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদদের অনেকেই খুন হয়ে যাবেন। এ ঐতিহ্য তাদের আছে। জিয়া কি ক্ষমতায় গিয়ে কয়েক হাজার সৈন্য হত্যা করেন নি? আর জামায়াতের ইতিহাস তো হত্যার ইতিহাস। দু’পক্ষ দু’পক্ষকে চরম ঘৃণা করে। একপক্ষকে অবশ্যই অবনত হতে হবে নইলে এ দেশে স্থিতিশীলতা আসবে না।
শুধু টাকার ব্যাপার হলে পরিস্থিতি এতো সংঘাতময় হতো না। টাকা দল চিনে না। বহিরঙ্গে এখনও আদর্শের খোলসটা রয়ে গেছে।
বিএনপি-জামায়াত আদর্শগত ভাবে পাকিস্তানের ভাবশিষ্য। পাকিস্তানের দর্শন তারা ধরে রেখেছে যক্ষের ধনের মতো। জামায়াত তো পাকিস্তানই। অনেকে বলবেন, তারা বাংলাদেশে থেকে কীভাবে পাকিস্তানি হলেন? হলেন এ কারণে যে, তারা যা করেন তা পাকিস্তানি ধ্যান ধারণা প্রতিষ্ঠার জন্য করেন। এবং কামাল হোসেন গং যে বিএনপি-জামায়াতে গেলেন তার কারণ, ক্ষমতা ভোগ করা। ক্ষমতার বাইরে থাকতে থাকতে তারা ক্লান্ত। ক্ষমতার স্বাদ তারা পেতে চান। কাদের সিদ্দিকী, মো. ইব্রাহীম মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন কিন্তু মনে রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যতটা সহজ ছিল, আজীবন মুক্তিযোদ্ধা থাকা ততটা কঠিন।
আওয়ামী জোটে আছে ১৪ দল।
এর বাইরে কিছু রেনিগেড দল যাদের সঙ্গে ১৪ দলের তেমন সম্পর্ক নেই। এই রেনিগেডদের রাখতে হয়েছে বর্তমান রাজনীতির কারণে। মহাজোটে স্বৈরচারী টাকাখোর এরশাদ ও চরম সাম্প্রদায়িক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী থাকলেও, ১৪ দল-কে কেউ পাকিস্তানের ধারক-বাহক মনে করে না। সংঘাতটা এখানেই। আওয়ামী লীগ জিতলে তারা ক্ষমতায় যাবে। ছোট জোট বড় জোটের কেউ না জিতলেও। আমরা চাই না রেনিগেডরা জিতুক। বিএনপির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য এবং তারেক বা ড. কামাল তখন বিএনপি-জামায়াতের নেতা হবেন না, মির্জা ফখরুলই হবেন।
ড. কামাল বিএনপির ভার নিয়েই বলছেন, তিনি বঙ্গবন্ধুকে ত্যাগ করে জিয়াকে যে বেছে নিলেন তার কারণ গণতন্ত্র রক্ষা। ধরা যাক ড. কামাল জিতলেন, তখন তিনি গণতন্ত্র না রাজাকারতন্ত্র বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করবেন? তারা হামলা মামলার কথা বারবার তুলছেন কিন্তু মানুষ কী ভাবে ভুলে যায় ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের কথা?
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কী ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কাজ করছেন তার কয়েকটি উদাহরণ দিতে চাই বা বলা যেতে পারে কী ভাবে পাকিস্তানকে ধারণ করেন-
১. বর্তমান বিএনপির ডি ফ্যাক্টো নেতা তারেক রহমান আগেই ঘোষণা করেছিলেন, বিএনপি জামায়াত একই মায়ের পেটে দু’ ভাইয়ের মতো। বিএনপির এক তরুণী নেত্রীও মাস খানেক আগে লন্ডন গিয়ে একই কথা ঘোষণা করেছেন।
২. জামায়াতের সঙ্গে মৈত্রী প্রশ্ন ডা. কামাল হোসেনের আপত্তি ছিল। আসলে পরণের শেষ পোশাকটি তিনি ত্যাগ করতে চান নি। ডা. কামাল সরকারের হয়ে কাজ করছেন অনেকে এ কথা বললেও, বিএনপি ড. কামালের পরিধানে শেষ বস্ত্রটুকুও হরণ করেছে। বিএনপি-জামায়াত এক থেকেছে এবং ড. কামাল ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিতদের বাধ্য করেছে তাদের সঙ্গে থাকতে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ড. কামাল হোসেনের আচরণ ও বক্তব্য প্রমাণ করেছে, বাধ্য হয়ে নয় ভালোবেসেই তিনি রাজাকারদের নেতৃত্ব নিয়েছেন। রাজাকারদের নিয়ে প্রশ্ন উঠলে যদি বলা হয় টাকা খেয়ে তারা প্রশ্ন করছে বা সাংবাদিকদের তিনি দেখে নেবেন তখন স্পষ্ট হয়ে যায় টাকাটা কে খেয়েছে।
তার জামাতাও একই কাজ করেছিল, এখন মনে হয় তাতে তার শ্বশুর অর্থাৎ ড. কামালের সায় ছিল। ফেরার পথে তার বাড়িতে হামলা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে উত্তেজিত স্বরে বলেছেন, লজ্জা হওয়া দরকার। লজ্জা শেখ হাসিনার নয় তার হওয়া দরকার। তাকে এখন ড.কামাল হোসেন না বলে ড. জামায়াত হোসেন বললেও অত্যুক্তি হবে না। তিনি গল্পের সেই উলঙ্গ রাজার মতো, যিনি বস্ত্রহীন কিন্তু তিনি মনে করেন তিনি দামি বস্ত্র পরিধান করেছেন। শত স্ববিরোধিতা ও সুবিধাবাদ সত্ত্বেও অনেকে কামাল হোসেনকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন। এখন বলতে হয়, দেশে শ্রদ্ধা করার মানুষ প্রায় শূন্যে কোঠায়। আমরা কেন, মার্কিন সরকারও ওইদিন জানিয়েছে, জামায়াতের প্রভাব বাড়ছে। সেটি বোধহয় ড. কামালের রাজাকারদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কারণেই বলেছে।
কাদের সিদ্দিকী নিজেকে বঙ্গবীর বলেন বটে। প্রথম আলো একবার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে দেখিয়েছিল, কাদের সিদ্দিকী ‘সোনার বাংলা’র নাম করে কী পরিমাণ অর্থ লোপাট করেছেন, একটি সেতুও কমপ্লিট না করে। সেই থেকে তার নাম সেতু সিদ্দিকী। তার প্রটেকশন দরকার। অন্যান্যরা রাজনীতি করতে করতে সত্তরের দিকে যাচ্ছেন বা সত্তর পেরিয়েছেন। আওয়ামী লীগে প্রচণ্ড ভিড়। তারা ঢুকতে পারছেন না। সুতরাং প্রচণ্ড সুবিধাবাদী ও ভণ্ড এরা ধানের শীষে আশ্রয় নিলেন। পাকিস্তানের আশ্রয়ে তারা গেলেন বটে কিন্তু বললেন, গণতন্ত্র রক্ষার জন্য তারা পাকিস্তানের সঙ্গে গেছেন। কিন্তু পাকিস্তান ও গণতন্ত্র যে সমার্থক নয় এটি তারা ভুলে গেছেন। এদের একসময় সবাই বিএনপি-জামায়াতকে গণতন্ত্রের শত্রু বলেছেন।
৩. বিএনপি মনোনয়ন দেয়ার সময় ৭ জন যুদ্ধাপরাধীকে মনোনয়ন দিয়েছে। ২৯ নভেম্বর বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেছিলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা কোন যুদ্ধাপরাধীকে বিএনপি ধানের শীষ প্রতীক দেবে না। কিন্তু ন’ জনকে তারা মনোনয়ন দিয়েছিলেন [জনকণ্ঠ ৫.১২.৭১]।
৪. বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা নজরুল ইসলাম খান বিজয়ের মাসে দেঁতো হাসি হেসে যখন জানান, জামায়াতে মুক্তিযোদ্ধা আছে তখন তিনি বাংলাদেশের জন্মকেও অপমান করেন।
৫. তারেক জিয়াও বিএনপির এক তরুণী ব্যরিস্টার নেত্রীর কথা উল্লেখ করেছি। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে টিভিতে শোনা গেল, বিএনপির নেতা খোন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রায় ভৃত্যের মতো পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর এক এজেন্টকে ব্রাদার মেহমুদ বলে কাকুতি মিনতি করছেন নির্বাচনে যেন চীনকে রাজি করায় কিছু একটা করতে। ১৯৭১ সালে চীন পাকিস্তানের পক্ষে থেকে গণহত্যাকে সমর্থন করেছে। বছর খানেক আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা সমর্থন করেছে। এর আগে সংবাদপত্রে খবর এসেছে ঢাকা ও লন্ডনে আইএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিএনপি নেতারা বৈঠক করেছেন নির্বাচন বানচালের জন্য। মির্জা ফখরুল এই তথ্য বানোয়াট বলেছেন। কিন্তু মোশাররফের কাকুতি মিনতি-তে মনে হচ্ছে আই এস আইয়ের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অনেকদিনের।
৬. বিএনপি ৪৯ জন জঙ্গি, জামায়াত যুদ্ধাপরাধী প্রভৃতিকে মনোনয়ন দিয়েছিল নির্বাচনে।
৭. মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার বিএনপি কখনও সমর্থন করেনি।
৮. বিএনপি সব সময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করেছে। বিএনপি পাকিস্তান আদর্শ ধারণ করে কিনা সে বিষয়ে প্রচুর তথ্য দেওয়া যেতে পারে। আমি শুধু কয়েকটির উল্লেখ করলাম।
যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বিএনপি-জামায়াত [কোর গ্রুপ] ২০দল তা’হলে ২০০১-২০০৭ পর্যন্ত যে তাণ্ডব চালিয়েছিল তা চালাত না। ২০১৪ সালে কয়হাজার মানুষ বিএনপি-জামায়াত হত্যা করেছে নির্বাচন বানচাল করার জন্য? বিজ্ঞ কামাল হোসেন সেগুলি ভুলে যাননি নিশ্চয়। কামাল হোসেন থেকে আবু সাইয়িদ যদি এতই বঙ্গবন্ধুপ্রেমী হন এবং মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করেন, তাহলে তারা ধানের শীষ বহন করে বেড়াচ্ছেন কেন? কোনো যুক্তি দিয়েই তারা এ প্রশ্ন খণ্ডাতে পারবেন না। বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল আমরা বলিনি, বলেছে কানাডার আদালত। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বর্তমান সরকারের ব্যর্থতা জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা। এতে কোনও রাজনৈতিক লাভ হয়নি। আদালত জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করেছে, তাতে কোনও লাভ হয়নি। তারা প্রকাশ্যে নিজেদের জামায়াতী বলে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছে এবং বিএনপি তাদের ব্যানারে নির্বাচন করতে দিচ্ছে। দু’টিই অপরাধ। কিন্তু হাইকোর্ট বা নির্বাচন কমিশন এতে উচ্চবাচ্য করেনি। হাইকোর্টকে অনেক ক্ষেত্রে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করতে দেখেছি কিন্তু এক্ষেত্রে নয়। আমাদের সবার মনের গহীনে এক টুকরো পাকিস্তান রয়ে গেছে। না’হলে, এতো কাজ গত দশ বছরে হওয়ার পরও দেখি অনেকে দোদুল্যমান।
অনেকে বলেন, একটা পরিবর্তন হওয়া দরকার। পরিবর্তন মানে কী অগ্রসরতার বদলে অনগ্রসরতা? উন্নয়নের বদলে অনুন্নয়ন? গণতন্ত্রের বদলে সাম্প্রদায়িকতা? স্থিতিশীলতার বদলে অস্থিতিশীলতা? খুন, ধর্ষণ?
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে অজস্র লুট, খুন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এহসানুল হক মিলনের কারণে আমরা নিজ বাড়িতেও যেতে পারিনি পাঁচবছর। আমাদের এলাকা কচুয়া থেকে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পাঁচ বছর গ্রাম ছাড়া ছিল। আজ বিএনপির কেউ সন্ত্রাসের দায়ে গ্রেপ্তার হলে মিডিয়ার সমবেদনা উপচে পড়ে, সে সমবেদনা আগে কখনও দেখিনি। বিএনপির কোনও নেতাকে গণতন্ত্রের কথা বলতে দেখলে আমার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। দৈনিক সংবাদে খুব সম্ভব ২০০২ সালে প্রতিবেদনটি দেখেছিলাম।
অজ পাড়াগাঁয় এক বিধবার বাড়ি। কিশোরী কন্যা নিয়ে তিনি সেখানে থাকেন। খালেদার ১০/ ১২ জন সোনার ছেলে বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে। বিধবা মা টের পেয়ে হ্যারিকেন নিয়ে দরজা খুলে দেন। তারপর হাত জোড় করে বলেন- বাবারা তোমরা এক সঙ্গে এস না, একজন একজন করে এসো। আমার মেয়েটা ছোট।
তরুণরা শেখ হাসিনাকে গতবার ক্ষমতায় এনেছিলেন যাতে গণতন্ত্রের বদলে রাজাকারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হয়। তিনি তা প্রতিরোধ করেছেন। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে সফল হননি তার প্রমাণ বর্তমান নির্বাচন।
খবরে দেখলাম অধ্যাপক হিসেবে কথিত আবু সাইয়িদ নাকি নিজামীর কবর জিয়ারত করতে যাচ্ছিলেন। জামায়াত প্রশ্নে ডা. কামাল ওরফে ডা. জামায়াত বলেন, খামোশ [পরদিন তিনি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন]। খামোশ বললেই কি অপ্রমানিত হবে যে, তিনি তারেকের নির্দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না। ঐক্যফ্রন্ট জিতলে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তাতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তরুণরা। কারণ তাদের ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়নের অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা জরুরি। তাই বিজয়ের মাসে তরুণদেরও আবার সিদ্ধান্ত নিতে হবে গণতন্ত্রের বদলে কি রাজাকারতন্ত্র চান? বিজয়ীর দেশে কি পরাজিতের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চান?